https://eeraboti.com/uploads/images/ads/Trust.webp

চুল আঁচড়াতে গেলেই কি গোছা গোছা চুল উঠে আসছে? জেনে নিন স্টাইলিং ও আঁচড়ানোর সময় চুল ভাঙা রোধ করার কার্যকরী উপায়

top-news
  • 20 Dec, 2025
https://eeraboti.com/uploads/images/ads/eporichoy.webp

চুলের যত্ন ও সঠিক চিরুনি নির্বাচন – এক পূর্ণাঙ্গ গাইড

আমাদের অনেকেরই ধারণা, "চুল পড়ছে" মানেই বোধহয় গোড়া থেকে উঠে আসছে। কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, অনেক সময় চুল গোড়া থেকে নয়, বরং মাঝখান থেকে ছিঁড়ে যাচ্ছে। এটাকে বলা হয় Hair Breakage বা চুল ভেঙে যাওয়া। বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা বা বড় শহরগুলোর দূষণ, পানির সমস্যা (Hard Water), আর আমাদের চিরাচরিত কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে এই সমস্যা এখন ঘরে ঘরে।

আজকে আমি কোনো কঠিন মেডিকেল সায়েন্স কপচাবো না। একদম আমাদের দেশি লাইফস্টাইল, আমাদের প্রতিদিনের রুটিন আর সাধ্যের মধ্যে থাকা সমাধানগুলো নিয়ে কথা বলবো। কীভাবে একটু সচেতন হলেই চিরুনির দাঁতে আটকে থাকা চুলের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব, চলুন গভীরে গিয়ে জানা যাক।

কেন চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যায়? (আসল কারণগুলো)

চুল ভাঙার সমাধান করার আগে বুঝতে হবে কেন চুলটা ভাঙছে। আমাদের চুলের গঠন অনেকটা গাছের ডালের মতো। শুকিয়ে গেলে যেমন ডাল মট করে ভেঙে যায়, চুলের আর্দ্রতা কমে গেলে বা ভুলভাবে চাপ দিলে সেটাও ভেঙে যায়।

১. ভুল চিরুনির ব্যবহার: প্লাস্টিকের সস্তা চিরুনি ব্যবহার করা আমাদের অনেকের অভ্যাস। এই চিরুনিগুলোতে "Static Electricity" তৈরি হয়, যা চুলের কিউটিকল নষ্ট করে দেয়।
২. ভেজা চুলে চিরুনি চালানো: গোসল সেরে এসেই তাড়াহুড়ো করে ভেজা চুল আঁচড়াতে শুরু করা—এটা হলো চুল ভাঙার ১ নম্বর কারণ। ভেজা অবস্থায় চুল ইলাস্টিকের মতো দুর্বল থাকে।
৩. অতিরিক্ত টাইট হেয়ারস্টাইল: সারাদিন শক্ত করে পনিটেইল বা খুব টাইট করে বেণি করে রাখা। এতে চুলের শ্যাফটে (Shaft) টান পড়ে এবং ধীরে ধীরে চুল দুর্বল হয়ে ছিঁড়ে যায়। একে বলা হয় Traction Alopecia।
৪. হিট স্টাইলিং ও কেমিক্যাল: বিয়ে বাড়ি বা পার্টির আগে স্ট্রেইটনার বা কার্লিং আয়রন ব্যবহার করা এখন খুব কমন। কিন্তু হিট প্রোটেকশন স্প্রে ছাড়া এই কাজ করা মানে চুলকে আগুনে পোড়ানোর সমান।
৫. বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পানি: আমাদের বাতাসের আর্দ্রতা (Humidity) চুলকে ফ্রিজি করে দেয়। তার ওপর সাপ্লাইয়ের পানিতে থাকা আয়রন ও ক্লোরিন চুলকে রুক্ষ করে তোলে।

ধাপ ১: সঠিক চিরুনি বা ব্রাশ নির্বাচন – গেম চেঞ্জার

আপনার হেয়ার কেয়ার রুটিনে হাজার টাকার শ্যাম্পু-কন্ডিশনার থাকতে পারে, কিন্তু আপনার চিরুনিটা যদি সঠিক না হয়, সব প্রচেষ্টাই বৃথা।

  • নিমের বা কাঠের চিরুনি (Wooden Comb): প্লাস্টিক বাদ দিন। ভালো মানের নিম কাঠের চিরুনি ব্যবহার করুন। এটি স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলে জট পাকাতে দেয় না।

  • মোটা দাঁতের চিরুনি (Wide-Tooth Comb): জট ছাড়ানোর জন্য সবসময় মোটা ফাঁকা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন। চিকন দাঁতের চিরুনি শুধুমাত্র স্টাইলিং বা সিঁথি করার জন্য।

  • প্যাডেল ব্রাশ: যাদের চুল অনেক লম্বা, তারা জট ছাড়ানোর পর ফিনিশিং এর জন্য প্যাডেল ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।

ধাপ ২: চুল আঁচড়ানোর সঠিক নিয়ম (Step-by-Step)

অনেকেই ভাবেন, চুল আঁচড়ানোর আবার নিয়ম কী? উপর থেকে নিচে টান দিলেই তো হলো! এই ভুলটাই আমরা করি।

জট ছাড়ানোর টেকনিক:
কখনোই চুলের গোড়া থেকে আঁচড়ানো শুরু করবেন না।
১. প্রথমে চুলের আগার দিকের ৩-৪ ইঞ্চি অংশ আলতো করে আঁচড়ে জট ছাড়ান।
২. এরপর একটু উপরে উঠুন এবং আঁচড়ান।
৩. এভাবে ধাপে ধাপে গোড়ার দিকে যান।
এতে গোড়ায় টান পড়ে না এবং চুল ছেঁড়ে না।

ভেজা চুল বনাম শুকনো চুল:
ভেজা চুলে ব্রাশ লাগাবেন না। চুল ৮০% শুকিয়ে যাওয়ার পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান। যদি খুব তাড়া থাকে, তবে আঙুল দিয়ে আলতো করে জট ছাড়িয়ে নিন।

ধাপ ৩: স্টাইলিং যখন ভয়ের কারণ – নিরাপদ থাকার উপায়

বাঙালি নারীদের শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের সাথে বিভিন্ন হেয়ারস্টাইল খুব পছন্দ। কিন্তু স্টাইলিং যেন চুলের শত্রুর না হয়।

  • টাইট রাবার ব্যান্ড বর্জন: রাবার ব্যান্ড চুলের সাথে ঘষা খেয়ে চুল ছিঁড়ে ফেলে। এর বদলে সাটিন বা সিল্কের স্ক্রাঞ্চি (Satin Scrunchies) ব্যবহার করুন। এগুলো পিচ্ছিল হওয়ায় চুলে ঘষা লাগে না।

  • হিট স্টাইলিং সতর্কতা: সপ্তাহে ১ বারের বেশি চুলে হিট দেবেন না। আর যখনই দেবেন, অবশ্যই ভালো মানের হিট প্রোটেক্ট্যান্ট সিরাম ব্যবহার করবেন। হিট দেওয়ার পর চুলে ঠান্ডা বাতাস (Cold Shot) দিন, এতে কিউটিকল বন্ধ হয়।

  • হিজাব পরলে সতর্কতা: আমাদের দেশের অনেক নারী হিজাব পরেন। দীর্ঘক্ষণ হিজাবের নিচে চুল বাঁধা থাকলে ঘাম জমে এবং চুল দুর্বল হয়ে যায়। সুতি কাপড়ের ইনার ক্যাপ ব্যবহার করুন এবং বাসায় ফিরে চুল খুলে বাতাস লাগান।

ধাপ ৪: ঘরোয়া যত্ন – রান্নাঘরের জাদুকরী সমাধান

পার্লারের দামী ট্রিটমেন্ট সবসময় নিরাপদ হয় না। আমাদের মা-খালাদের কিছু ঘরোয়া টোটকা চুল ভাঙা রোধে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

১. হট অয়েল ম্যাসাজ (Hot Oil Massage):
নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল হালকা গরম করে স্ক্যাল্পে নয়, পুরো চুলে বিশেষ করে চুলের আগায় লাগান। তেল চুলকে পিচ্ছিল করে, ফলে আঁচড়ানোর সময় ঘর্ষণ (Friction) কমে।

২. চাল ধোয়া পানি (Rice Water):
ভাতের মাড় বা চাল ধোয়া পানিতে ইনোসিটল (Inositol) থাকে, যা ড্যামেজ রিপেয়ার করতে সাহায্য করে। শ্যাম্পুর পর চুলে স্প্রে করে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

৩. অ্যালোভেরা জেল:
চিরুনি করার আগে যদি দেখেন চুল খুব রুক্ষ, তবে সামান্য অ্যালোভেরা জেল পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে নিন। এটি ন্যাচারাল ডিট্যাঙ্গলার (Detangler) হিসেবে কাজ করে।

মিথ বনাম বাস্তবতা (Myths vs Facts)

  • মিথ: দিনে ১০০ বার চুল আঁচড়ালে চুল লম্বা হয়।

    • বাস্তবতা: ভুল ধারণা। অতিরিক্ত আঁচড়ালে (Over-brushing) বরং ঘর্ষণের ফলে চুল ভেঙে যায় এবং আগা ফাটে। দিনে ২-৩ বার আঁচড়ানোই যথেষ্ট।

  • মিথ: তেল দিলেই চুল পড়া বন্ধ হবে।

    • বাস্তবতা: তেল চুলের পুষ্টি যোগায় এবং কন্ডিশনিং করে, কিন্তু অতিরিক্ত তেল দিয়ে জুবুথুবু হয়ে থাকলে ধুলোবালি জমে উল্টো হেয়ার ফল বাড়ে।

লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাস

শুধু বাইরে থেকে যত্ন নিলে হবে না। চুল গঠিত হয় প্রোটিন (Keratin) দিয়ে। তাই আপনার দুপুরের খাবারে ডাল, ডিম বা মাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। প্রচুর পানি পান করুন। ডিহাইড্রেশন হলে চুল খরের মতো শুকনো হয়ে যায় এবং সহজেই ভেঙে যায়।

উপসংহার

চুল ভাঙা রোধ করা একদিনের কাজ নয়, এটি একটি চর্চা। আজ থেকেই প্লাস্টিকের চিরুনি বদলে ফেলুন, ভেজা চুলে অত্যাচার বন্ধ করুন এবং চুলে একটু ভালোবাসার স্পর্শ দিন। মনে রাখবেন, সুস্থ চুলই আসল সৌন্দর্য। স্টাইলিং হবে, কিন্তু চুলের ক্ষতি করে নয়। ধৈর্য ধরে এই নিয়মগুলো মেনে চললে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে আপনি নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

TrustShopBD (www.trustshopbd.com) is one of the most trusted places in Bangladesh to buy authentic and premium products related to ‘hair care tools and accessories’, known for reliable delivery, genuine quality, and responsive customer support.



https://eeraboti.com/uploads/images/ads/Genus.webp

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *